Skip to main content

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে চর্যাপদের গুরুত্ব, চর্যাপদ, charyapada

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে চর্যাপদের গুরুত্ব ঃ

চর্যাপদ হল বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম এবং প্রামাণ্য নিদর্শন, তাই চর্যাপদাবলীর গুরুত্ব যে অসামান্য নয় তা আমাদের স্বীকার করতেই হবে। চর্যাপদের পূর্বে বাংলা ভাষায় কোনো লিখিত নিদর্শন পাওয়া যায় নি। তাই চর্যাপদের সমকালীন সামজের সমাজচিত্র সিদ্ধাচার্যগণদের সাধনগীতির স্বরুপ মানবজীবনের গূঢ় তত্ত্ব অসাধারণ সাহিত্য ভঙ্গিতে শিল্পিত হয়েছে চর্যাপদাবলীতে, তাই চর্যাপদাবলীর ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম। পূর্বে আমরা একটি পোস্ট এ চর্যাপদাবলী থেকে কিছু অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করেছিলাম। আজকের এই পোস্ট এ আমরা চর্যাপদাবলীর আবিষ্কার ও তার গুরুত্ব আলোচনা করবো।

চর্যাপদাবলীর আবিষ্কারঃ

চর্যাপদাবলীর আবিষ্কার ছিল বাংলা সাহিত্যের এক যুগান্তরকারী ঘটনা। এর আবিষ্কারের পেছনে পূর্ব ইতিহাস রয়েছে। উনিশ শতকের শেষ দিকে রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র সর্বপ্রথম বৌদ্ধতান্ত্রিক সাহিত্যের বিচিত্র বিষয়, দুরূহ দর্শন ও অজ্ঞাতপূর্ব জীবনচর্যার রূপ সম্বন্ধে কৌতুহলী পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি নেপালে গিয়ে এই ধরনের বহু সংস্কৃত পুঁথি উদ্ধার করলেন। এদের মধ্যে কিছু নির্বাচিত পুথির কথাবস্তুর বিবরন দিয়ে তিনি ১৮৮২ খ্রীস্টাব্দে 'Sanskrit Buddhist Literature in Nepal' নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। রাজেন্দ্রলালের মৃত্যুর পর মহামহোপাধ্যায় ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর উপর ভারত সরকার প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহের ভার দেন। রাজেন্দ্রলালের পুস্তক ও অন্যান্য পুঁথি পত্রের ভিত্তিতে হরপ্রসাদ অনুমান, বৌদ্ধধর্ম সংক্রান্ত নানা পুঁথি সংরক্ষিত থাকতে পারে নেপালের নানা স্থানে। তিনি বৌদ্ধধর্ম সংক্রান্ত নানা পুঁথি সংগ্রহের জন্য ১৮৯৭ প্রথম এককভাবে, ১৮৯৮ খ্রীস্টাব্দে বৌদ্ধশাস্ত্রবিশারদ অধ্যাপক বেন্ডলের সঙ্গে দ্বিতীয় বার এবং ১৯০৭ সালে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নিজেই তৃতীয় বার নেপাল যাত্রা করেন। এরপর তিনি নেপাল থেকে 'চর্যাচর্যবিনিশ্চয়' ('চর্যাগীতিকোষ'), সরহপাদের অবহট্ট ভাষায় রচিত দোহা, অদ্বয়ব্রজের সংস্কৃতে রচিত 'সহজাম্মায় পঞ্জিকা' নামে টিকা, কৃষ্ণাচার্যের দোহা এবং আচার্যপাদের সংস্কৃতে রচিত 'মেখলা' নামে একটি টিকা সংগ্রহ করেন। দ্বিতীয়বার নেপাল যাত্রায় তিনি 'ডাকার্ণব' নামে একটি পুঁথি সংগ্রহ করেছিলেন। পরে ১৯১৬ খ্রীস্টাব্দে (১৩২৩ বঙ্গাব্দে) কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী 'চর্যাচর্যবিনিশ্চয়' সরহপাদের দোহা, কৃষ্ণাচার্যের দোহা ও 'ডাকার্ণব'- এই চারটি বইকে একত্রে 'হাজার বছরের পুরাণ বাংলা ভাষায় 'বৌদ্ধগান ও দোহা' নামে প্রকাশ করেন। হরপ্রসাদ সহজ ভাষায় বুঝেছিলেন, 'চর্যাচর্যবিনিশ্চয়' ('চর্যাগীতিকোষ') এবং অপর তিনটি পুঁথির ভাষা প্রাচীনতম বাংলা ভাষার নিদর্শন। কিন্তু ১৯২৬ খ্রীস্টাব্দে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় 'The Origin and Development of the Bengali Language' গ্রন্থে নিঃসংশয়ভাবে প্রমান করেন যে, শাস্ত্রী-সংগৃহীত শুধু প্রথম পুঁথি 'চর্যাচর্যবিনিশ্চয়' ('চর্যাগীতিকোষ') প্রাচীনতম বাংলা ভাষায় রচিত। বাকি তিনটি গ্রন্থের ভাষা শৌরসেনী বা পশ্চিমা অপভ্রংশ। 

গুরুত্বঃ

হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ('চর্যাচর্যবিনিশ্চয়') গ্রন্থের আবিষ্কার নানা দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ-

১. চর্যাপদ আবিষ্কারের ফলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া গেল। চর্যাপদ আবিষ্কারের আগে ড. দীনেশচন্দ্র সেন 'বঙ্গভাষা' ও সাহিত্য' গ্রন্থে রামাই পন্ডিতের 'শূন্যপুরাণ', ডাক ও খনার বচন প্রভৃতিকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের আদি নিদর্শন বলেছিলেন। কিন্তু চর্যাপদ আবিষ্কৃত হবার পর এই ভ্রান্ত ধারণা বদলে গেল।

২. চর্যাপদে আমরা বাংলা ভাষার অপরিণত রূপটি দেখতে পায়।

৩. চর্যাপদে বাংলা ভাষার আদিস্তরের রূপতাত্ত্বিক এবং ধ্বনিতাত্ত্বিক প্রকৃতি চিহ্নিত এবং সুস্পষ্ট হল।

৪. চর্যাপদে আমরা পয়ার ও ত্রিপদী ছন্দের আদিম নিদর্শন দেখতে পায়। 

৫. বাংলা সাহিত্যের পরবর্তী কীর্তন-পদাবলী, সহজিয়া-পদাবলী ও বাউলগানের সঙ্গে বাংলা কাব্য ও সাহিত্যের এই আদিম নিদর্শনের যোগসূত্রটিও খুঁজে পাওয়া গেল।

৬. চর্যাপদের মাধ্যমে আমরা সেকালের অর্থাৎ বাঙালির প্রাচীনতম জীবনচিত্র ও আধ্যাত্ম সাধনার রূপ দেখতে পায়। 

সুতরাং চর্যাপদাবলীর আবিষ্কার বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অপরিমেয় গুরুত্ব বহন করে চলেছে। 

Bangla sahityer itihas, Wbpsc Bengali, Slst Bengali, NET, SET
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে চর্যাপদের গুরুত্ব

----------------------------------------------------------------------------

আরও পড়ুনঃ

Comments

Popular posts from this blog

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য | sri krishna kirtan | শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য প্রশ্ন উত্তর |বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস | wbssc

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য | sri krishna kirtan | শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য প্রশ্ন উত্তর |বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস | wbssc      শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য 1. শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি কে কবে আবিষ্কার করেন ? উঃ বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে। 2. কাব্যটি কোথা থেকে আবিস্কার করা হয় ? উঃ বাঁকুড়া জেলার কাঁকিল্যা গ্রামে শ্রীনিবাস আচার্যের বংশধর দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের গোয়াল ঘরের মাচা থেকে । 3. শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি কে কখন লিখেছেন? উঃ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি বড়ু চণ্ডীদাস চতুর্দশ শতকের প্রথমার্ধে লিখেছেন । 4. শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি কোথা থেকে কত সালে প্রকাশিত হয় ?  উঃ ১৩১৬ বঙ্গাব্দে (১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে) বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত হয় । 5. শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটির প্রকৃত নাম কী ছিল ? উঃ শ্রীকৃষ্ণ সন্দর্ভ । 6. বড়ু চণ্ডীদাসের কাব্যে কিসের কিসের প্রভাব আছে? উঃ ভাগবত,পুরাণ ও জয়দেবের গীতগোবিন্দের । 7. শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের কয়টি খন্ড রয়েছে? উঃ ১৩ টি । 8. শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের খন্ড গুলির নাম উল্লেখ করুন? উঃ জন্ম খন্ড , তাম্বুল খন্ড , দান খন্ড, নৌকা খন্ড , ভার খন্ড , ছত্র

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস | কাশীরাম দাস প্রশ্ন উত্তর

  বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস   Q.1 অন্নদামঙ্গল কার লেখা?  Or অন্নদামঙ্গল কাব্যের রচয়িতা কে? উঃ ভারতচন্দ্র রায়। Q.2 ভারতচন্দ্রকে রায়গুণাকর উপাধি কে প্রদান করেন? উঃ রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। Q.3 ভারতচন্দ্র কোন কাব্য ধারার শ্রেষ্ঠ কবি?  উঃ ভারতচন্দ্র মধ্যযুগীয় মঙ্গলকাব্য ধারার শ্রেষ্ঠ কবি।  Q.4 কঙ্কাবতী উপন্যাস কার লেখা?  উঃ কঙ্কাবতী উপন্যাস ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় এর লেখা।  Q.5 কঙ্কাবতী কাব্যটি কার লেখা?  উঃ কঙ্কাবতী কাব্যটি বুদ্ধদেব বসুর লেখা।  Q.6 কাফি খাঁ কার ছদ্মনাম?  উঃ কাফি খাঁ প্রফুল্ল চন্দ্র লাহিড়ীর ছদ্মনাম।  Q.7 বিনয় মুখোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম কি?  উঃ বিনয় মুখোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম হলো যাযাবর। Q.8 সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম কি?  উঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম হলো সুবচনী।  Q.9 নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম কি?  উঃ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম হলো সুনন্দ। Q.10 সত্যপীর কার ছদ্মনাম? উঃ সত্যপীর সৈয়দ মুজতবা আলীর ছদ্মনাম।  Q.11 নীহারিকা দেবী কার ছদ্মনাম?  উঃ নীহারিকা দেবী অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের ছদ্মনাম।  Q.12 নীলকন্ঠ কার ছদ্মনাম?  উঃ প্রভাত মুখোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম নীলকন্ঠ।  Q.13 অনিলা দেবী

শাক্ত পদাবলী | বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস | wbssc |

শাক্ত পদাবলী    1. শাক্ত পদাবলী কী?  উঃ অষ্টাদশ শতাব্দীতে দেবী কালিকা বা  শ্যামার আরাধনা বিষয়ক যে সমস্ত পদ  রচিত  হয়েছিল তা-ই শাক্ত পদাবলী নামে পরিচিত। 2. শাক্ত পদাবলীকে কয়টি পর্যায়ে ভাগ করা যায়?  উঃ (ক) আগমনী (খ) বিজয়া (গ) ভক্তের  আকুতি।  3. শক্তি ধর্ম বিষয়ক প্রাচীনতম পরিচয়  কোথায় পাওয়া  যায় ?  উঃ ঋগ্বেদের দেবীশুক্তে ।  4. শাক্ত পদের আরেক নাম কী ?  উঃ 'মালসী'। এই গান গুলি মালবশ্রী রাগে গাওয়া হত তাই এরূপ নামকরন ।  5. শাক্ত পদাবলীর শ্রেষ্ঠ পদকর্তা কে?  উঃ রাম প্রসাদ সেন ।  6. রাম প্রসাদ সেনের পরিচয় দাও?  উঃ ঈশ্বর গুপ্তের তথ্য অনুসারে রাম  প্রসাদের জন্ম ১৭২০-১৭২১ খ্রিস্টাব্দ  এবং ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে তিনি দেহ ত্যাগ করেন। তাঁর জন্ম হালি শহরের অন্তর্গত কুমার হট্ট গ্রামে।  7. কবি রাম প্রসাদ সেনের প্রথম গান কী?  উঃ "আমায় দাও মা তবিলদারি" 8. কবি রাম প্রসাদ সেনের পিতার নাম কী? উঃ রাম রাম সেন।  9. কবি রাম প্রসাদ সেনকে কবিরঞ্জন উপাধি কে প্রদান করেন? উঃ রাজা কৃষ্ণচন্দ্র।  10. কবি রাম প্রসাদ সেন আর কোন কোন কাব্য রচনা করেন?  উঃ 'বিদ্যাসুন্দর','কালীকীর্তন','কৃষ্ণকী