সাহিত্যের রূপ ও রীতি | Sahityer rupriti | wbssc slst bengali
১. মন্ময় কবিতা কাকে বলে?
উঃ যে কবিতায় বস্তু জগৎ বা বাস্তব জগৎ নয় কবির নিজস্ব কল্পনার জগৎ, আবেগ, অনুভূতি প্রকাশ পায় তাকে মন্ময় কবিতা বলে।
বিহারীলালের সারদা মঙ্গল, অক্ষয় কুমার বড়ালের এষা।
২. তন্ময় কবিতা কাকে বলে?
উঃ যে কবিতায় কবির নিজস্ব কল্পনার জগৎ নয় বাস্তব জগৎ প্রাধান্য পায় অর্থাৎ বাস্তব জগৎ বা বস্তু জগৎ-ই যেখানে কবি প্রকাশ করে থাকেন তাকেই বলা হয় তন্ময় কবিতা।
৩. সনেট কী?
উঃ সনেট হল বিশেষ ছন্দরীতিতে রচিত ১৪ টি চরণে সংগঠিত কবিতা যার প্রতিটি চরণে ১৪ টি করে অক্ষর থাকবে। সনেটের প্রথম ৮ টি চরণের স্তবককে বলা হয় অষ্টক এবং পরবর্তী ৬ টি চরণের স্তবককে বলা হয় ষটক। অষ্টকে থাকে মূলত ভাবের প্রবর্তনা এবং ষটকে থাকে ভাবের পরিণতি।
সনেটের আদি কবি হলেন পেত্রার্ক। আর বাংলা সাহিত্যে সনেটের প্রবর্তক হলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
৪. ওড বা স্তোত্র কবিতা কাকে বলে?
উঃ ওডের উৎওত্তি হয়েছে প্রাচীন গ্রীসে। প্রাচীন গ্রীসে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে যে বন্দনা মূলক বা স্তুতি মূলক গান গাওয়া হত তা-ই ওড। এই ওড পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলা সাহিত্যে বহু ওড বা স্তোত্র কবিতা রচিত হয়েছে। যেমন - সুরেন্দ্র মজুমদারের মাতৃস্তুতি, অক্ষয় কুমার বড়ালের মানব বন্দনা, সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের নমস্কার, রবীন্দ্রনাথের বর্ষাশেষ, মোহিতলাল মজুমদারের নারী স্তোত্র, জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন।
ইংরেজি সাহিত্যেও আমরা ওড দেখতে পায় - টমাস গ্রের 'দ্য প্রোগ্রেস অব পোয়েজি', শেলির 'ওড টু দ্য ওয়েস্ট উইন্ড', কিটসের 'ওড টু দ্য নাইটিঙ্গল।
৫. শোক কবিতা বা এলিজি কাকে বলে?
উঃ যে কবিতায় কবির ব্যক্তিগত শোক প্রকাশ পায় তাকে শোক কবিতা বা এলিজি বলে।
এলিজির শ্রষ্টা হলেন মিল্টন। বাংলায় যে সব শোক কাব্য লেখা হয়েছে সেগুলি হল - বিহারীলাল চক্রবর্তীর 'বন্ধু বিয়োগ', গোবিন্দ দাসের 'বঙ্কিম বিদায়', রবীন্দ্রনাথের 'সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত', অক্ষয় কুমার বড়ালের 'এষা' ইত্যাদি।
৬. ব্যালাড বা গাথা কবিতা কী?
উঃ ব্যালাড হল নৃত্য সহযোগে গান। এখানে কোনো একটি কাহিনী বা ঘটনাকে গানের মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করা হয়।
বাংলার ব্যালাড বা গাথা কবিতা গুলি হল- ময়মনসিংহ গীতিকা, গোপীচান্দের গান।
৭. হাইকু কী?
উঃ হাইকু হল এক ধরনের কবিতা যেটি সংক্ষিপ্ত আকারে মাত্র তিনটি পঙক্তিতে রচিত হয়ে থাকে। হাইকু কবিতার জন্ম হয়েছিল জাপানে। রবীন্দ্রনাথের 'লেখন' এর ছোটো ছোটো কবিতাগুলি হাইকুর উদাহরণ।
৮. রাখালিয়া কাব্য কী?
উঃ রাখালিয়া কাব্য হল এমন কাব্য যেখানে রাখাল তথা মেষ পালকের কথা পাওয়া যায়। যেখানে রাখালের জীবনের বেদনার প্রকাশ লক্ষ করা যায়।
৯. কাহিনী কবিতা কী?
উঃ কাহিনী কবিতা অনেকাংশে গাথা কাব্যের মতোই। যে কবিতায় কোনো কাহিনী বা ঘটনাকে বর্ণনার উদ্দেশ্য রচিত হয় সেই কবিতা-ই হল কাহিনী কবিতা। অর্থাৎ যে কবিতার মূলে থাকে কোনো কাহিনীর বর্ণনা সেটাই হল কাহিনী কবিতা।
১০. মহাকাব্য বা এপিক কাকে বলে?
উঃ মহাকাব্য বা এপিক হল সুদীর্ঘ বীরগাথা যেখানে দেশ কিংবা সংস্কৃতির বীরত্ব গাথা ও ঘটনাক্রমের বিস্তৃত বিবরণ তুলে ধরা হয়।
১১. এপিকের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন?
উঃ সংস্কৃত আলংকারিক বিশ্বনাথ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ 'সাহিত্য দর্পণে' এপিক বা মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করেছেন। সেগুলি হল-
i. মহাকাব্যের আখ্যান বস্তু হবে পৌরাণিক বা ঐতিহাসিক।
ii. মহাকাব্যের নায়ক হবেন ধীরোদাত্ত গুন সম্পন্ন।
iii. মহাকাব্য কমপক্ষে ৯ টি ও ৩০ টি সর্গে বিভক্ত হবে প্রতি সর্গের শেষে পরবর্তী সর্গের সূচনা থাকবে
iv. শৃঙ্গার, বীর ও শান্ত রসের একটি হবে প্রধান রস।
v. ভাষা হবে গাম্ভীর্য পূর্ণ।
১২. এপিক কয় প্রকার ও কী কী?
উঃ এপিক বা মহাকাব্য দুই প্রকার- i. Authentic epic
ii. Literary epic
বাল্মিকীর 'রামায়ন', ব্যাসদেবের 'মহাভারত', হোমারের ইলিয়াড ওডিসি এগুলো authentic epic.
মিল্টনের 'প্যারাডাইস লস্ট', মধুসূদন দত্তের 'মেঘনাদ বধ' কাব্য এগুলো হল literary epic.
১৩. মক এপিক কাকে বলে?
উঃ কোনো তুচ্ছ বা হাস্যকর বিষয় নিয়ে প্রাচীন মহাকাব্যের রীতি পদ্ধতি অবলম্বনে বিদ্রুপাত্মক কাব্য রচিত হলে তাকে মক এপিক বলে।
মক এপিকের উদাহরণ - জগদ্বন্ধু ভদ্রের 'ছুছুন্দরী বধ কাব্য', ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'ভারত উদ্ধার'।
১৪. স্যাটায়ারিক বা ব্যঙ্গ কবিতা কাকে বলে?
উঃ যে কবিতায় কোনো ব্যক্তি বিশেষ এর আচার আচরণ, সামাজিক রীতি নীতিকে ব্যঙ্গ করা হয় তাকে স্যাটায়ারিক বা ব্যঙ্গ কবিতা বলে।
১৫. স্যাটায়ার (ব্যঙ্গ কবিতা) শব্দটির উৎস কী?
উঃ স্যাটায়ার শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ 'satira' থেকে। যার অর্থ হল হাসি কান্না মিশ্রিত কৌতুক।
Comments
Post a Comment